গত পাঁচ বছরে কুষ্টিয়া-১ (দৌলতপুর, সংসদীয় আসন-৭৫) আসনের সংসদ সদস্য আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা’র বাৎসরিক আয় ৩ লক্ষ টাকা থেকে ২৩ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬৯ লাক্ষ ১ হাজার ৭৫৪ টাকা। বাৎসরিক আয় বাড়ার সাথে সাথে তার মোট সম্পদ ৩৮ লক্ষ ৫০ হাজার ২০০ টাকা থেকে ৭.৭৯ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩ কোটি ৬৯ লক্ষ ৯৩ হাজার ৪২৮ টাকায়। আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা’র সম্পদ বাড়ার সাথে সাথে অস্বাভাবিক ভাবে বেড়েছে তার স্ত্রী’র সম্পদও। গত পাঁচ বছরে তার স্ত্রী’র সম্পদ ২ লক্ষ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা থেকে ৪০.৪৭ গুণ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ১ কোটি ১৩ লক্ষ ৫২ হাজার ১৩৯ টাকায়।
আর এই সমস্ত তথ্য উঠে এসেছে একাদশ ও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে দাখিলকৃত আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা’র হলফনামা থেকে। দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনী হলফনামায় আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা তার বাৎসরিক আয় ৬৯ লাক্ষ ১ হাজার ৭৫৪ টাকা দেখিয়েছেন। আয়ের উৎস হিসাবে কৃষি খাত থেকে বছরের আয় করেন ৪৯ হাজার ৫৮০ টাকা, ব্যবসা থেকে বছরে তার আয় ৩৬ লক্ষ ৪৫ হাজার ৪৪৭ টাকা, আইন পেশা থেকে প্রতি বছর তিনি ৭ লক্ষ ২০ হাজার টাকা আয় করেন।
এছাড়াও চাকুরী (এমপি সন্মানী) থেকে তিনি ৬ লক্ষ ৬০ হাজার টাকা এবং অনান্য (এমপি ভাতা) বাবদ ১৮ লক্ষ ২৬ হাজার ৭২৭ টাকা প্রতি বছর আয় করেন। এছাড়াও আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা ও তার স্ত্রীর ৪ কোটি ৮৩ লক্ষ ৪৫ হাজার ৫৬৭ টাকার সম্পত্তি রয়েছে। যার মধ্যে সরওয়ার জাহান বাদশা’র নিজের ৩ কোটি ৬৯ লক্ষ ৯৩ হাজার ৪২৮ টাকার সম্পত্তি এবং তার স্ত্রী’র ১ কোটি ১৩ লক্ষ ৫২ হাজার ১৩৯ টাকা মূল্যের সম্পত্তি।
সরওয়ার জাহান বাদশা’র ৩ কোটি ৬৯ লক্ষ ৯৩ হাজার ৪২৮ টাকার সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে নগদ ৩১ লক্ষ ৫২ হাজার ৮৩০ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমান ২৭ লক্ষ ৫২ হাজার ২৬৬ টাকা, তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শেয়ার ক্রয় করেছেন ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬০০ টাকার, নিজ নামীয় ক্রয়কৃত ২টি গাড়ীর মূল্য ধরেছেন ১ কোটি ২৫ লক্ষ ২৮ হাজার ৩৬০ টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রীর বিস্তারিত বিবরণ না দিলেও ইলেকট্রনিক সামগ্রী বাবদ দেখিয়েছেন ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ব্যবহৃত আসবাবপত্রের বিস্তারিত বিবরণ না দিলেও তার মূল্য দেখিয়েছেন আরো ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, কৃষি জমির পরিমান উল্লেখ না করলেও অর্জনকালীন সময়ে মূল্য দেখিয়েছেন ৫ লক্ষ ৪০ হাজার ২০০ টাকা, অকৃষি জমির পরিমান উল্লেখ না করলেও অর্জনকালীন সময়ে মূল্য দেখিয়েছেন ১৭ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪০০ টাকা এবং নিজ মালিকানাধীন ১টি গরুর খামারের মূল্য দেখিয়েছেন ১ কোটি ৫৫ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৭২ টাকা।
সরওয়ার জাহান বাদশা’র স্ত্রী’র ১ কোটি ১৩ লক্ষ ৫২ হাজার ১৩৯ টাকার সম্পত্তির মধ্যে রয়েছে নগদ ৮ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯০৭ টাকা, ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত অর্থের পরিমান ২ লক্ষ ৩১ হাজার ৯৩৯ টাকা, তিনি বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান থেকে শেয়ার ক্রয় করেছেন ৩ লক্ষ টাকার, নিজ নামীয় ক্রয়কৃত ১টি গাড়ীর মূল্য ধরেছেন ১৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা, ইলেকট্রনিক সামগ্রীর বিস্তারিত বিবরণ না দিলেও ইলেকট্রনিক সামগ্রী বাবদ দেখিয়েছেন ৪০ হাজার টাকা, ব্যবহৃত আসবাবপত্রের বিস্তারিত বিবরণ না দিলেও তার মূল্য দেখিয়েছেন আরো ৬০ হাজার টাকা, কৃষি জমির পরিমান উল্লেখ না করলেও অর্জনকালীন সময়ে মূল্য দেখিয়েছেন ২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা, অকৃষি জমির পরিমান উল্লেখ না করলেও অর্জনকালীন সময়ে মূল্য দেখিয়েছেন ৫ লক্ষ ৬২ হাজার ৬০০ টাকা, কোন স্থান উল্লেখ ছাড়া ও বিস্তারিত বিবরণ ছাড়া ১টি বাড়ী বা এপার্টমেন্টের মূল্য দেখিয়েছেন ৬১ লক্ষ ৪২ হাজার ৪৩৮ টাকা এবং নিজ মালিকানাধীন ১টি মৎস্য খামারের মূল্য দেখিয়েছেন ১৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ২৫৫ টাকা।
অন্যদিকে কোন ব্যাংক বা অর্থিক প্রতিষ্ঠানের নাম না উল্লেখ করে ব্যাক্তিগত গাড়ী কেনা বাবদ ঋণ দেখিয়েছেন ৯৫ লক্ষ টাকা। অন্যদিকে একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের আগে নির্বাচন কমিশনে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা আইন পেশা থেকে বাৎসরিক আয় দেখিয়েছিলেন ৩ লক্ষ টাকা। সেই হলফনামা অনুযায়ী সেই সময় আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা’র নগদ টাকা ছিলো ৭ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকার পরিমান ছিলো ১০ লক্ষ। তখন তিনি নিজ নামীয় একটি গাড়ীর মূল্য দেখিয়েছিলেন মাত্র ১ লক্ষ টাকা। ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর মূল্য দেখিয়েছিলেন ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং আসবাব পত্রের মূল্য দেখিয়েছিলেন আরো ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা। সেই সময় হলফনামায় তিনি ২ একরের কিছু বিশী জমির মূল্য দেখিয়েছিলেন ২৪ লক্ষ টাকা। আর তার স্ত্রী স্বর্ণ ও অনান্য মূল্যবান অলংকারাদী ছাড়া কোন সম্পদ ছিলো না সেই হলফনামায় প্রতীয়মান হয়। তার স্ত্রী স্বর্ণ ও অনান্য মূল্যবান অলংকারাদীর মূল্য সেই সময় তিনি দেখিয়েছিলেন ২ লক্ষ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা। দ্বাদশ ও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা’র দাখিলকৃত হলফনামা বিশ্লেষন করলে দেখা যায়, গত পাঁচ বছরে তার নগদ টাকা ৭ লক্ষ ৫০ হাজার ২০০ টাকা থেকে ২৪ লক্ষ ২ হাজার ৬৩০ টাকা বেড়ে ৩১ লক্ষ ৫২ হাজার ৮৩০ টাকা দাড়িয়েছে।
এছাড়াও একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী তার স্ত্রীর নগদ কোন টাকা না থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী তার স্ত্রীর নগদ ৮ লক্ষ ৪৬ হাজার ৯০৭ টাকা আছে। গত পাঁচ বছরে আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা’র ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে জমাকৃত টাকার পরিমান ১০ লক্ষ থেকে ১৭ লক্ষ ৫২ হাজার ২৬৬ টাকা বেড়ে ২৭ লক্ষ ৫২ হাজার ২৬৬ টাকায় দাঁড়িয়েছে। পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানে কোন টাকা না থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দাখিলকৃত হলফনামায় ২ লক্ষ ৩১ হাজার ৯৩৯ টাকা দেখানো হয়েছে।
পাঁচ বছর পূর্বে সরওয়ার জাহান বাদশা ও তার স্ত্রীর শেয়ার বাজারে কোন বিনিয়োগ না থাকলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দাখিলকৃত হলফনামায় তার ১ লক্ষ ৬৬ হাজার ৬০০ টাকা এবং তার স্ত্রীর নামে ৩ লক্ষ টাকা বিনিয়োগ দেখানো হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী তার একটি গাড়ী মূল্য ১ লক্ষ টাকা দেখানো হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী তার ২টি গাড়ীর মূল্য ১ কোটি ২৪ লক্ষ ২৮ হাজার ৩৬০ টাকা দেখানো হয়েছে। অপর দিকে পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর কোন গাড়ী না থাকেলও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী তার স্ত্রীর একটি গাড়ীর মূল্য দেখানো হয়েছে ১৫ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা।
গত পাঁচ বছরে আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা’র ইলেকট্রনিক্স সামগ্রীর মূল্য ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা এবং আসবাবপত্রের মূল্য ২ লক্ষ ৫০ হাজার টাকা অপরিবর্তিত থাকলেও পাঁচ বছর আগে তার স্ত্রীর কোন ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী ও আসবাবপত্র ছিলো না। কিন্তু দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচন উপলক্ষে দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী বর্তমানে তার স্ত্রীর ৪০ হাজার টাকার ইলেকট্রনিক্স সামগ্রী এবং ৬০ হাজার টাকার আসবাবপত্র রয়েছে বলে দেখানো হয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদের হলফনামায় আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা’র কৃষি জমির (অর্জনকালীন সময়ে) মূল্য ২৪ লক্ষ টাকা দেখানো হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাখিলকৃত হলফনামায় ১৮ লক্ষ ৫৯ হাজার ৮০০ টাকা কমিয়ে ৫ লক্ষ ৪০ হাজার ২০০ টাকা দেখানো হয়েছে। অপর দিকে একাদশ জাতীয় সংসদের হলফনামায় তার স্ত্রীর নামে কোন কৃষি জমি না দেখানো হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাখিলকৃত হলফনামায় তার স্ত্রীর ২ লক্ষ ৮৫ হাজার টাকা মূল্যের কৃষি জমি আছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
একাদশ জাতীয় সংসদের হলফনামায় অনুযায়ী আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা ও তার স্ত্রীর নামে কোন অকৃষি জমি না দেখানো হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাখিলকৃত হলফনামায় তার ১৭ লক্ষ ৭৩ হাজার ৪০০ টাকার অকৃষি জমি দেখানো হয়েছে এবং তার স্ত্রীর নামে ৫ লক্ষ ৬২ হাজার ৬০০ টাকার অকৃষি জমি দেখানো হয়েছে। পাঁচ বছর আগে আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশা ও তার স্ত্রীর নামে কোন বাড়ী বা এপার্টমেন্ট দেখানো না হলেও দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাখিলকৃত হলফনামায় তার স্ত্রীর নামে স্থান উল্লেখ ব্যতিরেকে ৪১ লক্ষ ৪২ হাজার ৪৩৮ টাকার বাড়ী বা এপার্টমেন্ট দেখানো হয়েছে। পাঁচ বছর আগে আ. কা. ম. সরওয়ার জাহান বাদশার নামে কোন গরুর খামার না থাকলে দ্বাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দাখিলকৃত হলফনামা অনুযায়ী বর্তমানে তার ১ কোটি ৫৫ লক্ষ ৭৯ হাজার ৭৭২ টাকা সমমূল্যের একটি গরুর খামার রয়েছে বলে উল্লেখ করা হয়েছে।
এছাড়াও তার স্ত্রী গত পাঁচ বছরে ১৩ লক্ষ ৩৩ হাজার ২৫৫ টাকা সমমূল্যের নতুন একটি মৎস্য খামারের মালিক হয়েছেন। অন্যদিকে পাঁচ বছরে আগে তার স্ত্রীর ২ লক্ষ ৮০ হাজার ৫০০ টাকা সমমূল্যের স্বর্ণ ও অনান্য মূল্যবান অলংকারাদীর থাকলেও বর্তামানে তার স্ত্রী কোন স্বর্ণ ও অনান্য মূল্যবান অলংকারাদী নেই।
উল্লেখ্য, নির্বাচন কমিশন ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, নির্বাচনে প্রার্থীদের মনোনয়নপত্র দাখিলের শেষ দিন ছিল ৩০ নভেম্বর, মনোনয়নপত্র যাচাই-বাছাই ১ থেকে ৪ ডিসেম্বর, মনোনয়ন আপিল ও নিষ্পত্তি ৬ থেকে ১৫ ডিসেম্বর, প্রার্থিতা প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ১৭ ডিসেম্বর। প্রতীক বরাদ্দ হবে ১৮ ডিসেম্বর এবং নির্বাচনী প্রচার-প্রচারণা ১৮ ডিসেম্বর থেকে ৫ জানুয়ারি সকাল ৮টা পর্যন্ত চলবে। আগামী বছরের ৭ জানুয়ারি ব্যালট পেপারে ভোটগ্রহণ অনুষ্ঠিত হবে।