BDBanglaNews is a popular online newspaper

    ডাঃ মোঃ হোসেন ইমাম; ফাইল ফটো

    হঠাৎ ওজন হ্রাসের কারণসমূহ:

    বিভিন্ন রোগের কারণে হঠাৎ ওজন হ্রাস পেতে পারে। কেবল শারীরিক রোগ নয়, মানসিক রোগের কারণেও ওজন কমতে পারে। হরমোন ও বিপাকজনিত সমস্যা যেমন- ডায়াবেটিস, হাইপারথাইরয়েডিজম, অ্যাডিসন ডিজিজ ও প্যান হাইপোপিটুইটারিজম ইত্যাদি রোগে ওজন কমে যায়। দীর্ঘমেয়াদি কিছু সংক্রমণ যেমন- যক্ষা, কালাজ্বর, লিভার অ্যাবসেস এবং এইডস জাতীয় রোগ হলে অল্প সময়ে ওজন কমে যায়।তব  ওজন কমে যাওয়ার আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ হচ্ছে ক্যান্সার। শরীরের নানা জায়গায় ক্যান্সার হতে পারে যেমন- খাদ্যনালী, পাকস্থলি, কোলন, প্যানক্রিয়াস, লিভার, পিত্তনালি, মস্তিষ্ক, নাক-কান-গলা, থাইরয়েড, ফুসফুস, কিডনি, মূত্রথলী, হাড়, রক্ত, জরায়ু, ওভারি, সার্ভিক্স ইত্যাদি। বেশির ভাগ ক্যান্সারের একটি গুরুত্বপূর্ণ উপসর্গ হচ্ছে ওজন হ্রাস বা স্বাস্থ্যহানি।

    অন্যান্য লক্ষণ:

    ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হলে বারবার পানি পিপাসা পায়, ঘন ঘন প্রস্রাব হয়, বেশি ক্ষুধা লাগে, ক্ষুধা সহ্য হয় না এবং ধীরে ধীরে ওজন কমতে থাকে। পরিবারের ডায়াবেটিস রোগী থাকলে ডায়াবেটিসের ঝুঁকি বেশি।হাইপারথাইরয়েডিজম হলে ওজন হ্রাসের পাশাপাশি গরম অসহ্য লাগে, ভীষণ ঘাম হয়, ডায়রিয়া হতে পারে, অস্থিরতা ও বুক ধরফর করবে।অ্যাডিসন ডিজিজে স্বাস্থ্যহানির পাশাপাশি দুর্বলতা, পাতলা পায়খানা ও বমি, পেটব্যথা, রক্ত চাপ কমে যাওয়া, রক্তে সোডিয়াম কমে যাওয়া, শরীরের বিভিন্ন স্থানে কালো দাগ, মাথা ঘোরা ইত্যাদি উপসর্গ থাকে।প্যান হাইপোপিটুইটারিজম এ ধরনের সমস্যার সঙ্গে ফ্যাকাসে ভাব, মাসিকের সমস্যা থাকে। যক্ষা বা টিবি আমাদের দেশে বেশ পরিচিত একটা সমস্যা। এ রোগ ফুসফুসসহ শরীরের যে কোন অঙ্গে হতে পারে। বিকেলে বা সন্ধ্যার দিকে রোগীর হালকা ঘুষঘুষে জ্বর হয়,ওজন কমে যায় এবং খাবারে অরুচি দেখা দেয়। কোথায় যক্ষ্মা হয়েছে, সে অনুযায়ী কাশি, কাশির সঙ্গে রক্ত, বুকব্যথা, পেটব্যথা, পেটে পানি আসা, মাথাব্যথা, অজ্ঞান হয়ে যাওয়া, লসিকা গ্রন্থি ফুলে যাওয়া ইত্যাদি হতে পারে। কালাজ্বর আমাদের দেশের নির্দিষ্ট কিছু এলাকায় হয়ে থাকে। বিশেষ করে ময়মনসিংহ ও রাজশাহী বিভাগে বেশি দেখা যায়। এ রোগের দীর্ঘমেয়াদি জ্বর,খাওয়ার অরুচি, শরীর কালো হয়ে যায়, পেট ফুলে যায়, ওজন কমে যায়  ইত্যাদি উপসর্গ দেখা দেয়। লিভার অ্যাবসেস হলে প্রচুর জ্বর, পেটে ডান দিকে উপরের দিকে ব্যথা, ওজন হ্রাস দেখা দেয়, কখনো জন্ডিসও দেখা দিতে পারে। কোথায় হয়েছে

     তার ওপর নির্ভর করে ক্যান্সারের উপসর্গ। তবে সবচেয়ে দ্রুত ওজন হ্রাস ইত্যাদি উপসর্গ থাকে। কোথায় হয়েছে, তার ওপর নির্ভর করে ক্যান্সারের উপসর্গ। তবে সবচেয়ে দ্রুত ওজন কমে পরিপাক তন্ত্রের ক্যান্সারে। খাদ্যনালির ক্যান্সারে গলায় খাবার আটকাতে পারে, রক্তবমি হতে পারে। পাকস্থলীর ক্যান্সারে উপরের পেটে ব্যথা, বমি, রক্তবমি। কোলন ক্যান্সারে পায়খানার সঙ্গে রক্তপাত, কালো পায়খানা, রক্তশূন্যতা, নিচের পেটে ব্যথা হতে পারে,পেট ফুলে যেতে পারে।প্যানক্রিয়াসের  ক্যান্সার হলে ওপর ও মাঝ পেটে ব্যথা হয়, জন্ডিস ও অরুচি হয়, বমিও হয়। লিভার ক্যান্সারে পেটে ডান দিকে উপরের দিকে ব্যথা হতে পারে। রক্ত চাকা আর জন্ডিস হতে পারে। ফুসফুসে ক্যান্সারে দীর্ঘমেয়াদি কাশি হয়ে থাকে, সঙ্গে বুকব্যথা, কাশি সঙ্গে রক্ত ও শ্বাসকষ্ট সমস্যা হতে পারে। কিডনি ও মূত্রথলি ক্যান্সারে প্রস্রাবের সঙ্গে রক্ত যেতে পারে। জরায়ু ক্যান্সারে মাসিকের রাস্তায় বেশি রক্ত যেতে পারে, তলপেটে ব্যথা হতে পারে। ওভারির ক্যান্সারে তলপেটে ব্যথা, পেটে পানি আসা, মাসিকের সমস্যা ইত্যাদি হয়ে থাকে। হাড়ে ক্যান্সার হলে হারে ব্যথা হয়। রক্তের ক্যান্সারে ঘন ঘন জ্বর হয়, নাক বা ত্বকের নিচে রক্তপাত, বুকের হাড়ে ব্যথা হয়। মানসিক কিছু রোগীও সিগনিফিকেন্ট ওয়েট লস (উল্লেখযোগ্য ওজন হ্রাস) হয়,যেমন অ্যনোরেকসিয়া নারভোসা। তা ছাড়া অতিরিক্ত দুশ্চিন্তার কারণেও কখনো কখনো ওজন কমে যেতে পারে।

    করণীয়:

    ওজন কমতে থাকলে অবশ্যই গুরুত্ব দিতে হবে এবং বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে। মনে রাখবেন, যে কোন রোগ প্রাথমিক অবস্থায় ধরা পড়লে চিকিৎসা নিরাময়ের সম্ভাবনা অনেক বেশি থাকে।এমনকি সেটা যদি ক্যান্সারও হয়। যারা ওজন কমাতে চেষ্টা করছেন ডায়েট বা শরীর চর্চা করছেন তারাও স্বাস্থ্যকর সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করবেন যেন স্বাস্থ্য ভেঙ্গে না যায়।অপুষ্টি দেখা না দেয়‌। পুষ্টিবিদ ও চিকিৎসকের পরামর্শ অনুযায়ী স্বাস্থ্যকর উপায়ে ওজন কমান।

    ডাঃ মোঃ হোসেন ইমাম আলী, লেকচারার, ম্যাটস, কুষ্টিয়া ও প্রধান উপদেষ্টা নিউ সান ডায়াগনস্টিক সেন্টার এন্ড প্রাইভেট হাসপাতাল, কুষ্টিয়া।

    Spread the love