BDBanglaNews is a popular online newspaper

    কুমারখালীর বি.কে.এম.এন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষকের কারসাজি! অনুসন্ধানী প্রতিবেদনের ১ম পর্ব

    কুষ্টিয়া অফিস।।

    কুষ্টিয়া জেলাধীন কুমারখালী উপজেলার পান্টি ইউনিয়নের দাশবসী গ্রামে ১৯৯৭ সালে প্রতিষ্ঠিত বসীগ্রাম কৃষ্ণপুর মুলগ্রাম নগরকয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সংক্ষেপে বিদ্যালয়টিকে বি.কে.এম.এন মাধ্যমিক বিদ্যালয় বলা হয়ে থাকে। বিদ্যালয়টিকে ২০২২ সালে এমপিওভুক্ত করা হয়েছে। 

    ২৬ বছর আগে প্রতিষ্ঠিত এই বিদ্যালয়টির প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে নিয়োগ বাণিজ্য সহ অনিয়ম ও দুর্নীতির একাধিক অভিযোগ উঠেছে। এসব অভিযোগের মধ্যে অন্যতম অর্থের বিনিময়ে সাল ভেদে একাধিক শিক্ষকের পদে এক শিক্ষককে নিয়োগ দান।একাধিক শিক্ষকের পদে নিয়োগ পাওয়া ঐ শিক্ষকের নাম আমজাদ হোসেন। 

    ব্যানবেজ টিচার্স ডাটাবেজ থেকে প্রাপ্ত তথ্যানুযায়ী, ২০০৩ সালের ১৬ই মে বি.কে.এম.এন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে (বসীগ্রাম কৃষ্ণপুর মুলগ্রাম নগরকয়া মাধ্যমিক বিদ্যালয়) যোগদান করেন আমজাদ হোসেন। ২০১৩ থেকে ২০১৪ সাল পর্যন্ত তিনি বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক (গনিত) হিসেবে কর্মরত ছিলেন। আমজাদ হোসেনকে ২০১৫ সালে গনিত ও বিজ্ঞান, ২০১৬ ও ১৭ সালে সমাজবিজ্ঞান, ২০১৮ থেকে ২১ সাল পর্যন্ত ইংরেজি ও ২০২২ সালে আইসিটির শিক্ষক হিসেবে দেখানো হয়েছে। সবশেষ আমজাদ হোসেনকে যে বিষয়ের শিক্ষক হিসেবে দেখানো হয়েছে এর আগে এই আইসিটির শিক্ষক হিসেবে ২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত শামসুন্নাহার, ২০১৯ থেকে ২০২০ সাল পর্যন্ত জাহাঙ্গীর আলম ও ২০২১ সালে আব্দুল মানিমকে দেখানো হয়েছিল। 

    অনুসন্ধানে জানা যায়, বিদ্যালয়ের বর্তমান প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান বিদ্যালয়ের প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক হিসেবে নিজেকে কাগজ কলম ও জনসম্মুখে দাবি করলেও তিনি আসলে প্রতিষ্ঠাতা প্রধান শিক্ষক নন। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক ছিলেন নিমাই বাবু নামের এক ব্যক্তি। “ধরি মাছ, না ছুঁই পানি” প্রবাদের মত ঐ শিক্ষককে শিকার করে বিদ্যালয় ছাড়া করেন মিজানুর রহমান। এরপর নিজেকে প্রধান শিক্ষকের পদে অধিষ্ঠিত করে নেমে পড়েন নিয়োগ বাণিজ্য সহ অনিয়ম দুর্নীতি করার মহোৎসবে। “শীঘ্রই বিদ্যালয় এমপিওভুক্ত হয়ে যাবে” এমন প্রলোভন দেখিয়ে সাল ভেদে ব্যাকডেটে অর্থের বিনিময়ে এক পদে একেক শিক্ষককে নিয়োগ দিতে থাকেন। হাতিয়ে নেন মোটা অংকের টাকা। এই মিজানুর রহমানের নিয়োগ সিন্ডিকেটে ছেলে মেয়ে উভয়েই ঠাঁই পেয়েছিলেন। তার চাহিদা মোতাবেক নিয়োগ গ্রহনের সময়ে ঘুষের টাকার অর্ধেক ও এমপিওভুক্ত হওয়ার পর অর্ধেক টাকার দেওয়ার শর্তে অনেকেই বি.কে.এম.এন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষক পদে যোগদান করেছিলেন। বছরের পর বছর কেটে যাওয়ার পর এমপিওভুক্ত না হওয়ায় টাকা ফেরত চেয়ে প্রাণ নাশের সম্মুখীন হতে হয়েছে অনেক শিক্ষকে। তাছাড়া অনেক মহিলা শিক্ষককে লালসার বস্তু বানিয়েছেন মিজানুর রহমান। বাধ্য হয়ে সম্ভ্রম ও জীবন বাঁচাতে বিদ্যালয় ছেড়ে চলে গেছেন অনেক শিক্ষক। যে কয়েকজন মিজানুর রহমানের চাহিদা মতো ঘুষের টাকা দিয়ে মুখ বুজে অত্যাচার নির্যাতন সহ্য করে বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষক পদে টিকে আছেন তাদের মধ্যে অন্যতম আমজাদ হোসেন। আমজাদ হোসেনকেও ব্যাকডেটে নিয়োগ দিয়ে ইচ্ছামতো সাল ভেদে বিভিন্ন বিষয়ের শিক্ষক বানিয়েছেন মিজানুর রহমান। এই প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমানের বিরুদ্ধে প্রতিটি অভিযোগ পর্ব আকারে প্রকাশ করা হবে। বিস্তারিত জানতে চোখ রাখুন পত্রিকার পাতায়। 

    একাধিক পদে নিয়োগ পাওয়া শিক্ষক আমজাদ হোসেন জানিয়েছেন, এসব ব্যাপারে তিনি কিছু জানেন না। যা করার প্রধান শিক্ষক করেছেন। তিনিই সব জানেন। 

    অভিযুক্ত প্রধান শিক্ষক মিজানুর রহমান জানান, ঢাকা থেকে তদন্ত দল আসছেন। আমি তাদের সাথে আছি। পরে কথা বলবো। তবে বিদ্যালয় থেকে জানা যায়, তিনি কুষ্টিয়ার বাসায় চলে গেছেন। 

    বিষয়টি নিয়ে সরাসরি সাক্ষাৎকালে কুমারখালী উপজেলা মাধ্যমিক শিক্ষা অফিসার মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, বিদ্যালয়ের বিরুদ্ধে নানান অভিযোগের প্রেক্ষিতে গত মাসের ২৭ তারিখ মন্ত্রণালয় থেকে একটি তদন্ত দল এসেছিল। তারা তদন্ত করেছেন। তদন্তে কোন ধরনের অনিয়ম দুর্নীতির প্রমাণ পেলে কোন ছাড় দেওয়া হবেনা।

    Spread the love