BDBanglaNews is a popular online newspaper

    কুষ্টিয়া :

    কুষ্টিয়া পৌরসভার ২১নং ওয়ার্ড কাউন্সিলর ও দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা আশার বিরুদ্ধে একেরপর এক জমি জালিয়াতির অভিযোগ উঠেই চলেছে। 

    গত ৬ নভেম্বর দলিল লেখক সোহেল রানা আশার বিরুদ্ধে কুষ্টিয়ার স্থানীয় ও জাতীয় বেশ কয়েকটি পত্রিকায় প্রয়াত জাতীয় শিল্পী বীর মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল জব্বারের জমি জালিয়াতির সংবাদ প্রকাশিত হয়। এরপর থেকে একেরপর এক জালিয়াতি করে জমি দখলের সংবাদ আসতে থাকে প্রতিবেদকের কাছে। এবার জন্মের আগেই জমি রেজিস্ট্রি করে নিয়েছেন দলিল লেখক সমিতির সাধারণ সম্পাদক সোহেল রানা আশা সহ তার দুই ভাই। সেই জমি দীর্ঘদিন ধরে দখলে রেখেছে সোহেল রানা আশা গংরা।

    এবিষয়ে গত ২৪ নভেম্বর বাদী হয়ে কুষ্টিয়া মডেল থানায় অভিযুক্ত মোল্লাতেঘড়িয়া এলাকার আফজাল হোসেনের ছেলে মাসুদ রানা (৪২), আরেক ছেলে কাউন্সিলর সোহেল রানা আশা (৩৮) ও সুমন রানা  (৩০) এর নামে একটি লিখিত অভিযোগ দায়ের করেছেন ভুক্তভোগী পরিবারের সদস্য আড়ুয়া পাড়া চামড়া পট্টি এলাকার মৃত মিজানুর রহমান মজনুর ছেলে আশিকুর রহমান (৪৫)। 

    থানার অভিযোগ সুত্রে জানা যায়, মোল্লাতেঘরিয়া মৌজার আর এস ১৩৬, দাগ নং ১৯০৫, ১৯০৬, ১৯৯৯, ২০০৪, ২০০৭, ১৯০০ মোট জমি ২ একর ৭৪ শতকের মধ্যে ৯৯ শতক জমি মাছুদুল কবির ও হুমায়ন কবির এর নিকট হইতে ২ (দুই) টি জাল দলিল তৈরি করে কাউন্সিলর আশা জমি জোরপূর্বক ভোগ দখল করে আসছে। এই জমি দখল করতে গেলে ভুক্তভোগী পরিবারের উপর স্বাভাবিক জীবন যাপন ব্যহত করছে তারা। যার জাল দলিল নাম্বার ১৯৭৮ সালে ১৫২৮১ ও ১৫২৮২ এবং ১৯৭৯ সালে ১২০৬ নং দলিল (বর্তমান দলিল ৭০০৭)।

    মূলত আরএস খতিয়ানে মূল মালিক মৃত এ্যাডভোকেট মাহাতাব উদ্দিন মণ্ডলের ওয়ারেশ মকলেছুর রহমান,  মিজানুর রহমান, নুরুন্নাহার ও নারগিছ পারভীন।

    আশা যেই জাল দলিল দেখাচ্ছে সেখানে উল্লেখ রয়েছে ১৯৭৮ সালের ১৭ নভেম্বর এই জমির মূল মালিকের ওয়ারিশগন মাছুদুল কবিরের কাছে বিক্রর করে দিয়েছে। যেই তারিখে রেজিস্ট্রি দেখিয়েছে সেই তারিখে মাসুদুল কবিরের জন্মই হয়নি। যার দলিল নাম্বার- ১৫২৮১। তারিখ ১৭ নভেম্বর ১৯৭৮ ইং। মাছুদুল কবির জন্ম গ্রহন করেছেন ৫ অক্টোবর ১৯৭৯ সালে। মাছুদুল কবিরের জন্মের আগেই কিভাবে তিনি  মৃত এ্যাডভোকেট মাহাতাব উদ্দিন মণ্ডলের ওয়ারেশদের কাছ থেকে জমি কিনলেন এ নিয়েও নানা ধ্রুম্যজালের সৃষ্টি হয়েছে। 

    এছাড়াও ২০০২ সালের ২৯ অক্টোবর  মাছুদুল কবির ও হুমায়ন কবির এর নিকট থেকে কাউন্সিলর আশা ও তার দুই ভাই  কুষ্টিয়া সাব রেজিস্ট্রি অফিস থেকে রেজস্ট্রি দেখাচ্ছে। সেই জমির মাছুদুল কবির ও হুমায়ুন কবির প্রকৃত মালিক না। যার দলিল নাম্বার -৭০১৭। তারিখ ২৯ অক্টোবর ২০০২ ইং। কাউন্সিলর আশা ও তার ভাইদেরকে মাছুদুল কবির ও হুমায়ন কবির চিনে ও জানেও না বলে জানান তারা। 

    বর্তমানে এই জমি মৃত এ্যাডভোকেট মাহাতাব উদ্দিন মণ্ডলের ওয়ারেশদের নামেই নাম পত্তন রয়েছে এবং ওয়ারেশগন নিয়মিত খাজনা পরিষদ করে আসছে। 

    (যাহার হোল্ডিং নং- ৩১০৬, ৩১৯৮ ও ৩২০৩, নামজারি খণ্ডিয়ান- ৩০৯৯, ৩১৯৭ ও ৩২০১)। কিন্তু তারপরেও কাউন্সিলর আশা ও তার ভাইয়েরা জমিগুলো জোরপূর্বক দখল করে ভোগ দখল করে আসছে। 

    শুধু তাই নয়, দলিল লেখক কাউন্সিলর আশা নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্য চালাকি করে বিএনপি সরকার ক্ষমতায় থাকাবস্থায় এ্যাডভোকেট মাহাতাব উদ্দিনের জায়গা নিজের দাবি করে স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স তৈরি করে। অন্যদিকে কাউন্সিলর আশা ২০১৪ সাল পর্যন্ত জমির খাজনা মূল মালিকের নামেই পরিষোধ করে আসছে বলেও জানা গেছে।

    এদিকে জমির মূল মালিকের ওয়ারেশগন নতুন করে তাদের জমি হেফাজতে নেওয়ার জন্য চেষ্টা চালালে কাউন্সিলর আশা ও তার দুই ভাই জাল দলিল দিয়ে ওয়ারিশদের নাম পত্তন বাতিল করার জন্য গত ২৭ সেপ্টেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে কুষ্টিয়া সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি)’র নিকট আবেদন করেন। যার আবেদনের মিস কেস নাম্বার – ৯৮/x11(১৫০)২০২৩-২০২৪। আবেদনের প্রেক্ষিতে কুষ্টিয়া সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন গত ৩০ নভেম্বর ২০২৩ ইং তারিখে উভয় পক্ষকে হাজির থেকে শুনানির দিন ধার্য করেন। শুনানির ধার্য দিনে এ্যাডভোকেট মাহাতাব উদ্দিনের ওয়ারিশগন হাজির হন। কিন্তু কাউন্সিলর আশা ও তার দুই ভাই উপস্থিত ছিলেন না। তাদের প্রতিনিধি হিসেবে তার বাবা দলিল লেখক আফজাল হোসেনকে পাঠান। উভয় পক্ষের উপস্থিতিতে কুষ্টিয়া সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) দবির উদ্দিন সমস্ত কাগজপত্র দেখে জেনে ও বুঝে কাউন্সিলর আশা ও তার ভাইদের আবেদনটি নামঞ্জুর করেন বলেও জানা গেছে। 

    বিষয়টি নিয়ে মাছুদুল কবির জানান, আমি দীর্ঘদিন যাবত অসুস্থ আছি। এই জমির সম্বন্ধে আমি কিছুই জানিনা এবং এই জমিতে যা আমি দেখেছি ১৯৭৮ সালের হুমায়ুন কবির ও মাছুদুল কবিরের কেনা। ১৯৭৮ সালে আমার জন্মই হয়নি। আমার ন্যাশনাল আইডি ও সমস্ত কিছু বলছে ১৯৭৯ সালের অক্টোবর মাসে আমি জন্মগ্রহণ করি। এখন কাউন্সিলর আশা ও তার ভাইরা ভূয়া দলিলে বলছে আমি জমি বিক্রি করেছি এবং আমার নামের যে স্বাক্ষর দেয়া হয়েছে ওই স্বাক্ষর আমার না ওটা জাল। 

    এডভোকেট মাহাতাব উদ্দিনের ছেলের বউ ফেরদৌসী রহমান বলেন, জমির মূল মালিক মাহাতাব উদ্দিন এডভোকেট। উনার ওয়ারিশ মোকলেসুর রহমান এডভোকেট, মিজানুর রহমান মজনু ওরা দুই ছেলে। নার্গিস পারভীন উনার মেয়ে, আর নুরুন্নাহার উনার স্ত্রী। এই জমি এখন জাল করে নিচ্ছে। আমার স্বামী এবং আমার ভাসুর এবং শাশুড়ি ননদ বিক্রি করেছে আশার কাছে। ১৯৭৮ সালের কথা জমির দলিল লেখছে ১৯৭৮ সালে নার্গিস পারভীন আমেরিকা ছিলো। আর ১৯৭৯ সালে আমার ভাসুর রাজশাহী ছিল তাও প্র্যাকটিস করতো। আরে জমি যদি বিক্রি করতো তাহলে আমি জানতাম। এটা সম্পূর্ণ জাল করে এই কাজ করেছে। এই জমির দলিল জাল করছে আশা। উনি জাল দলিল করে মালিক সেজে এখন জবর দখল করে চলছে। 

    এবিষয়ে অভিযুক্ত কাউন্সিলর আশার সাথে মুঠোফোনের মাধ্যমে যোগাযোগ করা হলে তিনি বলেন, জোড় করে আবার কোনদিন জমি দখল করা যায়? কাগজ পাতি না থাকলে কি আর জমি দখল করা যায়? ৪০ বছর ধরে খাচ্ছি এই জমি। ৪০ বছর ধরে কাগজ বাই কাগজ এই জমি। লাস্টে আমরাতো কুতুব উদ্দিনের ছেলেদের কাছ থেকে আমরা এই জমি কিনেছি। আমরা তো আর মাহাতাব উদ্দিনের কাছ থেকে এই জমি কিনিনি। মাহাতাবের ওয়ারেশদের কাছ থেকেও কিনিনি। মাহতাব উদ্দিনের কাছ থেকে কিনেছে কুতুব উদ্দিনের ছেলে পেলে আর কুতুব উদ্দিনের ছেলেদের কাছ থেকে আমরা কিনেছি। কুতুব উদ্দিনের ছেলে হুমায়ন কবির আর মাছুদুল কবির দুই ছেলের কাছ থেকে কিনেছি আমরা। এসময় প্রতিবেদক কাউন্সিলর আশাকে প্রশ্ন করেন ১৯৭৮ সালে মাছুদুল কবিরের জন্ম হয়নি তাহলে জমি মাছুদুল কবির কিনলো কিভাবে?  প্রশ্নের জবাবে কাউন্সিলর আশা বলেন, আরে জন্মের সাথে সাধ নাই। আরএস রেকর্ডে মাছুদুল কবিরের নাম আছে। আর মাছুদুল কবির নেশা করে ওর অস্বীকারের সাথে কোন সাধ নাই। ওর ভাই ছিলো রেজাউল। রেজাউল সনাক্তকারী হয়ছে এখনো স্বাক্ষীরা সবাই বেঁচে আছে। আর ওতো নেশা করে। ওকে ৫০০ টাকা দিলে ও আবোল তাবোল বলা শুরু করবে৷ আরেকটা টুপি আলা আছে ওর ভাই। ওকে জিজ্ঞাসা করেন৷ আমাদের কাছে বলেছে সইতো আমার আমারই মনে হচ্ছে। আর এসিল্যান্ড অফিসে শুনানির বিষয়ে আশা বলেন, আমার সময় ছিলোনা আমার আব্বা গেছিলো আজকে এমপি সাহেবের নমোনেশন নিয়ে আবার পৌরসভার মাসিক মিটিং ছিলো আনোয়ার আলী সাহেব স্থগিত করেছে উনার ছেলে আবার নমিনেশন জমা দিবে। এসিল্যান্ড অফিসের শুনানিতে মাছুদুল কবির আর হুমায়ন কবিরের নামে এখনও রেকর্ড আছে। আর জমি যতটুকু কিনেছে তার থেকে আরএস রেকর্ডে কম আছে৷ এসিল্যান্ড সাহেব বলেছে আপনি রেকর্ড সংশোধনীয় মামলা করে আপনি ঠিক করে নিতে পারবেন। 

    কুষ্টিয়া সদর সহকারী কমিশনার (ভূমি) মোঃ দবির উদ্দিন সাথে কথা বললে তিনি জানান, শুনানি হয়েছে। এখনো রায় হয়নি।

    Spread the love