লাঞ্ছিত রোগী ইফতেখার-উজ-জামানের ফাইল ফটো
কুষ্টিয়া অফিসঃ কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগের ডাক্তার, ইন্টার্ন ডাক্তার ও অন্যান্য কর্মচারী কর্তৃক শারীরিক ভাবে লাঞ্ছিত হয়েছেন রোগী ও রোগীর স্বজনরা। এছাড়াও লাঞ্ছিত ঐ রোগীকে প্রাণনাশের হুমকি দেওয়া হয়েছে বলেও জানা গেছে। গত ১ ডিসেম্বর রাতে এই লাঞ্ছনার ঘটনাটি ঘটেছে।
লাঞ্ছনার শিকার ঐ রোগী কুষ্টিয়া সদর উপজেলার কমলাপুর পিয়ারপুর গ্রামের মোঃ শহীদুল ইসলাম মিঞার ছেলে ইফতেখার-উজ-জামান। তিনি পেশায় একজন সফটওয়্যার ইঞ্জিনিয়ার (প্রকৌশলী) হিসাবে ঢাকাতে কর্মরত আছেন।
ভুক্তভোগী ইফতেখার-উজ-জামান জানান, আমি ও আমার স্ত্রী এবং সন্তান অবকাশ যাপনের জন্য বাড়ীতে অবস্থান করছি। পারিবারিক কিছু বিষয়ে অবসাদগ্রস্ত থাকার ফলে গত শুক্রবার (১ ডিসেম্বর ২০২৩) রাত আনুমানিক ৮ টার সময় আমি কিছু ঘুমের ওষুধ খেয়ে ঘুমিয়ে যাই। যা ১০ মিলিগ্লাম এর সমপরিমান। আমার পরিবার ভীত হবে আমাকে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট সদর হাসপাতালের জরুরী বিভাগে নিয়ে যায়। আমার সাথে আমার পিতা শহীদুল ইসলাম মিঞা, মা আফরোজা বেগম লিলি, খালাতো ভাই জুবায়ের আল মোঃ শুভ, খালাতো ভাই এর বন্ধু আরিফুল ইসলাম, খালু নাসিম ও অটো চালক রবিউল ছিলেন। আমরা আনুমানিক রাত ১০ টা থেকে ১১ টার মধ্যে হাসপাতালের জরুরী বিভাগে পৌঁছাই। সেখানে যাবার পর কর্তব্যরত চিকিৎসক আমার নিকট না এসে, কোনোকিছু না শুনে একপ্রকার জোর করে আমাকে ওয়াশ করতে পাঠিয়ে দিতে বলে। আমি ডাক্তারকে অনুরোধ করে বললাম, তিনি যেন আমার কাছে এসে অন্তত শোনেন। আমি কি ওষুধ খেয়েছি আর কত মিলিগ্রাম খেয়েছি সেটা তাকে জানাতে পারি। একপর্যায়ে একজন একটু কাছে উঠে আসলেন এবং উচ্চস্বরে বলে উঠলেন আপনার চিকিৎসা আমরা করবোনা, পারলে অন্য কোথাও যান। আমি সম্মানের সহিত তাকে জিজ্ঞাসা করলাম- আমি এই ওষুধটি ১০ মিলি খেয়েছি, একজন সুপ্ত প্রাপ্তবয়স্ক মানুষ দিনে সর্বোচ্চ কতো মিলি খেতে পারে? তিনি কোনো উত্তর দিলেন না। উপরক্ত একজন লম্বা মতো লোক পেছন থেকে সজোরে আমার মাথার পেছনে আঘাত করে। আমি তখন বিছানায় বসা। একই সাথে অজ্ঞাতনামা বেশ কয়েকজন আমার আব্বুকে ধাক্কা দিয়ে মেঝেতে ফেলে দেন এবং আমার আব্বুকে লাথি, কিল, ঘুশি দিয়ে মারাত্মকভাবে আহত করে। এছাড়াও আরিফুল ইসলামের বুক পিছন থেকে চেপে ধরে মারধর করে। আমার হাত টেনে কোনো একজন ডাক্তার ভেতরে রুমে নিয়ে মারবে বলে উদ্যত হয়। সেসময় আমার আম্মু তাদের হাতে পায়ে ধরে ও উপস্থিত কিছু ভালো মানুষের সহায়তায় আমাকে রক্ষা করে। আমরা প্রান ভয়ে দৌড়ে বের হয়ে কুষ্টিয়া সদর থানায় আশ্রয় নেই। ঘটনাস্থল থেকে জাতীয় জরুরী সেবা ৯৯৯ এ কল করে কোনোরূপ সহযোগিতা পায়নি। সেই রাতে কুষ্টিয়া সদর থানায় গিয়ে অভিযোগ দিতে চাইলে থানা পুলিশ কোন অভিযোগ নেয়নি।
তিনি আরো বলেন, আমি যথাযথ কর্তৃপক্ষের নিকট আমার ও আমার পরিবারের সাথে ঘটে যাওয়া এই ন্যাক্কারজনক ঘটনার সুষ্ঠ তদন্ত সাপেক্ষে দোষীদের সর্ব্বোচ্চ দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি দাবী জানিয়ে ৪ ডিসেম্বর ২০২৩ তারিখে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়কের নিকট লিখিত অভিযোগ দায়ের করি। অভিযোগের অনুলিপি জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার ও কুষ্টিয়া মডেল থানার অফিসার ইনচার্জকে পাঠিয়েছি।
সুত্রে জানা যায়, ১ ডিসেম্বর রাত সাড়ে ৮টা থেকে কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগের ডাক্তার হিসেবে দায়িত্ব পালন করছিলেন ডাঃ সামিউল হক শিমুল। বুধবার কুষ্টিয়া সদর হাসপাতালে গিয়ে ডাঃ সামিউল হক শিমুলকে পাওয়া যায়নি। এজন্য তার বক্তব্য দেওয়া সম্ভব হয়নি।
এই ব্যাপারে কুষ্টিয়া ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা: মো: রফিবুল ইসলাম বলেন, হাসপাতালের ইমারজেন্সি বিভাগের এক ডাক্তারের বিরুদ্ধে ইফতেখার-উজ-জামান নামের এক ব্যক্তি লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। অভিযোগের ভিত্তিতে হাসপাতালের সহকারী পরিচালক ডাঃ নাসির উদ্দিনকে প্রধান করে তিন সদস্য বিশিষ্ট কমিটি করা হয়েছে। কমিটি তদন্ত প্রতিবেদন দিলে পরবর্তী পদক্ষেপ গ্রহণ করা হবে।