
নিজস্ব প্রতিবেদক,বিডি বাংলা নিউজ২৪
কুষ্টিয়ার মিরপুর উপজেলার বাইপাস সড়ক সংলগ্ন ফাঁকা মাঠের ভেতর কয়েকটি টিনশেড রুম ও দুয়েকটি রাইড দিয়ে নির্মাণ করা হয়েছে রোড হলিডে পার্ক এন্ড রিসোর্ট। বিনোদন কেন্দ্র হিসেবে দেখানো হলেও প্রতিষ্ঠানটিতে চলছে রমরমা দেহব্যবসা। টিনশেড রুমের ভাড়া আদায় করা হচ্ছে ৪ হাজার টাকা, যা কুষ্টিয়া শহরের একমাত্র থ্রি-স্টার হোটেল দিশার চেয়েও বেশি। এতে আড়ালে থেকে যাচ্ছে লাখ লাখ টাকার হিসাব।
পার্ক সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ও এলাকাবাসীদের সঙ্গে কথা বলে এবং সরেজমিন পরিদর্শন করে এসব তথ্যের সত্যতা পাওয়া গেছে।
গত শুক্রবার পার্কটি সরেজমিনে পরিদর্শনের সময় দেখা যায়, বেশ চতুরতার সঙ্গে দায়িত্ব পালন করছেন প্রতিষ্ঠানটির কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। বাইরে থেকে দেখে বোঝার উপায় নেই, এখানেই চলছে রমরমা দেহব্যবসা। পার্কে প্রবেশ করেই বামপাশে দেখা মেলে লাল রঙের চারটি ঘর। সেখানে কর্মকর্তাদের সঙ্গে হাত ধরাধরি করে প্রবেশ করছেন নারী-পুরুষ।

কিছুক্ষণ চোখকান খুলে পার্কে ঘুরেই বোঝা যায়, পার্কের রাইডগুলোর কোনো ব্যবহার নেই। আর লাল রঙের ঘরগুলো ব্যবহৃত হচ্ছে দেহব্যবসার কাজে। বিষয়টি সন্দেহ হলে ডাকা হয় প্রতিষ্ঠানের ম্যানেজার সুমিকে।
সুমি জানান, রেস্টুরেন্টের লাল রঙের রুমগুলো ভাড়া পেতে গুনতে হবে নগদ ৪ হাজার টাকা। এছাড়া ভেতরের ভিআইপি রুমের ভাড়া ৬ থেকে ৮ হাজার টাকা। রুমে প্রবেশ করতে স্বামী-স্ত্রী হওয়া প্রয়োজন নেই, তবে জমা দিতে হবে জাতীয় পরিচয়পত্র। পরে সুমিকে সংবাদকর্মী পরিচয় দিয়ে রুমে আসলে কারা থাকছেন জানতে চাইলেই ঘটে বিপত্তি। ম্যানেজার সুমি একের পর এক ফোন দিতে থাকেন তার উর্ধ্বতনদের। একপর্যায়ে একটি রুম খুলে বেরিয়ে আসেন দুই সন্তানের জননী এক নারী। দ্রুত তার কাছে গিয়ে দেখা যায় ভেতরে উলঙ্গ পুরুষ। জানতে চাইলে কোনো লুকোচুরি না করে ওই নারী জানান, পুরুষটি তার পরকীয়া প্রেমিক। চার হাজার টাকা দিয়ে রুমটি ভাড়া নিয়েছেন দুপুর ১২টার দিকে। কিছুক্ষণ পরেই তারা চলে যাবেন। হট্টগোলের শব্দ শুনে পাশের রুম থেকে বেরিয়ে আসেন আরও দুই তরুণ-তরুণী, তারা এসেছেন দুপুরেই। ঐ তরুণীর ইতিপূর্বে ৪ বার বিয়ে হয়েছে। তিনি প্রবাসী যুবকের সাথে ফরিদপুর থেকে প্রেম করতে এসে রুম ভাড়া নিয়ে ঢুকেছিলেন। দুই সন্তানের জননী সবার হাতেপায়ে ধরে আকুতি জানান, ঘটনাটি গোপন রাখার জন্য। তারা নিয়মিতই পার্কের কাস্টমার হিসেবে আসেন বলে জানান। ততক্ষণে পার্কের এজিএম সোনালী এসে প্রতিবেদকদের দেখে নেওয়ার হুমকি দিতে থাকেন। সেখানকার তিন নম্বর রুমেও চলছিল অনৈতিক কাজ। তবে সেখানে প্রভাবশালী কেউ আছেন বলে রুম খোলা থেকে বিরত থাকেন তারা। একপর্যায়ে পার্কের কর্মকর্তা সংবাদকর্মীদের অনৈতিক সুবিধা দেওয়ার জন্য বারবার আড়ালে যাওয়ার আহ্বান জানাতে থাকেন। তারা বলতে থাকেন, কর্তৃপক্ষের চাওয়া মতোই প্রতিষ্ঠান পরিচালনা করছেন। বেতনভুক্ত কর্মচারীদের মালিকের কথার বাইরে যাওয়ার সুযোগ নেই। এ বিষয়ে কথা বলতে পার্কের মালিক ডেভেলপার ব্যবসায়ী রোজ বলেন, সেখানে কোনো দেহব্যবসা হয় না। যদি হয়ে থাকে, তাহলে আর হতে দেওয়া হবে না।

মিরপুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মমিনুল ইসলাম বলেন, সেখানে দেহব্যবসার অভিযোগ শুনেছি। তবে লিখিত অভিযোগ না থাকায় ব্যবস্থা নেওয়া যায়নি। এবার তদন্ত করে ব্যবস্থা নেওয়া হবে। রেস্টুরেন্টের আড়ালে দেহব্যবসার সুযোগ নেই।
বিডিবিএন২৪/আরডি

