
নিজস্ব প্রতিবেদক,বিডি বাংলা নিউজ২৪
প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার জ্ঞাত আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও তথ্য গোপনের দায়ে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ সাদিকুজ্জামান সুমনের বিরুদ্ধে মামলা করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন।
বিগত আ.লীগ সরকারের আমলে অধ্যক্ষের পদ ভাঙিয়ে বিপুল সম্পদের মালিক বনে গেছেন কুষ্টিয়ার দৌলতপুর ডিগ্রী কলেজের অধ্যক্ষ আওয়ামীলীগ নেতা ছাদিকুজ্জামান সুমন। অধ্যক্ষের পাশাপাশি আওয়ামী লীগের পদ-পদবি ব্যবহার করে ঠিকাদারি কাজের নামে বিপুল অর্থ নয়ছয় করার অভিযোগও আছে। দৌলতপুর ছাড়াও কুষ্টিয়া শহরে তিনি কোটি কোটি টাকার সম্পদ গড়েছেন। ৫ আগষ্টের পর গা ঢাকা দিয়েছেন। কলেজে না এসেও গোপনে বেতন তুলছেন বলে অভিযোগ পাওয়া গেছে। সর্বশেষ দুদকের জালে আটকে গেছেন তিনি।
গতকাল রবিবার তার বিরুদ্ধে আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের দায়ে মামলা দায়ের করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন দুদক কুষ্টিয়ার সমন্বিত কার্যালয়। মামলায় সুমনের বিরুদ্ধে প্রায় সাড়ে ৩ কোটি টাকার আয় বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের অভিযোগ আনা হয়েছে। মামলাটি দায়ের করেন দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার সহকারী পরিচালক বুলবুল আহমেদ।
মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান সুমনের নামে কুষ্টিয়ার দৌলতপুর উপজেলার মাস্টারপাড়ায় দৌলতপুর মৌজায় ০.০৫০০ একর জমি বাড়িসহ ও দৌলতপুর মৌজায় ১৪৫০ একর ধানি/ভিটা জমি রয়েছে। ওই
জমির দাম ও বাড়ির প্রকৃত নির্মাণ ব্যয় মিলিয়ে ২ কোটি ৭৮ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭৭ টাকা হওয়ার কথা কিন্তু তিনি ২০২১ সালের ৬ জানুয়ারি দাখিল করা সম্পদ বিবরণীতে জমিসহ নির্মাণাধীন বাড়ির মূল্য ২ কোটি ৫৯ লাখ ৩০ হাজার টাকা উল্লেখ করেছেন। এখানে তিনি ১৮ লাখ ৯৪ হাজার ৮৭৭টাকার সম্পদের তথ্য গোপন করেছেন।

এছাড়া তার নামে কুষ্টিয়া শহরের কালিশংকরপুর মৌজা, ১১৫ এনএস রোড (পরিমল টাওয়ারের পাশে) ০৬৮৭ একর
বাড়িসহ জমি রয়েছে। তিনি সম্পদ বিবরণীতে এর মূল্য উল্লেখ করেছেন ১ কোটি ৪৩ লাখ টাকা। তবে দুদকের তদন্তে ধরা পড়েছে এই সম্পদের প্রকৃত মূল্য ১ কোটি ৪৪ লাখ ৩০ হাজার ৫০০ টাকা। অন্যদিকে দৌলতপুর উপজেলার বাজুডাঙ্গা মৌজায় ০.১৬৫০০ একর ধানি জমিতে নির্মাণাধীন গোডাউন বাবদ সম্পদ বিবরণীতে বলা হয়েছে ২৬ লাখ টাকা। কিন্তু তদন্তে দেখা গেছে, এই সম্পদের প্রকৃত মূল্য ৩৮ লাখ ২১ হাজার ১২৮ টাকা। অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান সুমন তার দাখিলকৃত সম্পদ বিবরণীতে ২টি রোড রোলারের দাম উল্লেখ করেছেন ২৮ লাখ ৭০ হাজার টাকা। কিন্তু তার আরো একটি রোড রোলার এবং একটি এস্কেভেটর রয়েছে। এ দুটি সম্পদের কথা সম্পদের বিবরণীতে উল্লেখ করেননি তিনি। ওই রোলার ও এস্কেভেটর মূল্য ৫১ লাখ টাকা বলে মামলার এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। সব মিলিয়ে অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান সুমন মোট ৮৩ লাখ ৫৯ হাজার ৫০০ টাকার সম্পদের কথা গোপন করেছেন। এছাড়া দাখিলকৃত সম্পদের বিবরণীতে উল্লেখিত মূল্যের সঙ্গে প্রকৃত মূল্যের ২ কোটি ৫০ লাখ ১ হাজার ৭৫ টাকার গরমিল রয়েছে।
স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, বিগত আওয়ামী সরকারের সময় দৌলতপুর ডিগ্রী কলেজে ইতিহাস বিভাগে প্রভাষক হিসেবে যোগ দেন ছাদিকুজ্জামান সুমন। পরে দলীয় প্রভাব খাটিয়ে সিনিয়র শিক্ষকদের ডিঙিয়ে তিনি প্রথমে ভারপ্রাপ্ত অধ্যক্ষ এবং পরে অধ্যক্ষের পদ বাগিয়ে নেন। এরপর ক্ষমতার জোরে অনিয়ম দূর্নীতি করে বিপুল সম্পদের মালিক বলে যান তিনি। তার বিরুদ্ধে ২০২১ সালে দুদকের একটি অভিযোগ জমা পরে। এরপর সংস্থাটি সুমনের বিরুদ্ধে তদন্তে নামে। গেল পাঁচ আগস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতন হলে সুমন পালিয়ে যান।
দুদক সমন্বিত জেলা কার্যালয় কুষ্টিয়ার উপ-সহকারী পরিচালক সৈয়দ মাইদুল ইসলাম জানান, অধ্যক্ষ ছাদিকুজ্জামান সুমনের সম্পদ বিবরণের নথি এবং তার প্রকৃত সম্পদের তথ্য যাচাই-বাছাই শেষে যে তথ্য উঠে এসেছে তার ভিত্তিতে মামলা করা হয়েছে। এরই মধ্যে মামলার নথি সংশ্লিষ্ট আদালতে পাঠানো হয়েছে।

এই পরিপ্রেক্ষিতে জেলা ও দায়রা জজ বিশেষ আদালতে মামলাটি দাখিল করা হয়েছে। পরবর্তীতে আদালত শুনানিসহ বিচারিক প্রক্রিয়া শুরু করবেন বলে জানান আইনজীবী মুজাহিদ।
গত ৫ অগাস্ট আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর থেকে সুমন আত্মত্মগোপনে আছেন। তাই মামলার বিষয়ে তার বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।
বিডিবিএন২৪/আরডি

