নিউজ ডেস্ক,বিডি বাংলা নিউজ ২৪
পবিত্র ঈদ উল আযহার আর মাত্র ৩ দিন বাকি। প্রিয়জনদের সঙ্গে ঈদ উদযাপন করতে কর্মের শহর ছাড়তে শুরু করেছেন শিল্প-কারখানা অধ্যুষিত গাজীপুরের কর্মজীবী মানুষ।
বুধবার (০৪ জুন) সকাল থেকে গাজীপুরের দুই মহাসড়কে বেড়েছে নাড়ীর টানে বাড়ি ফেরা মানুষের চাপ। তবে, চাপ বাড়লেও যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে।
ঈদযাত্রায় বুধবার দুপুর পর্যন্ত কোথাও যানজটের দেখা মেলেনি। স্বস্তিদায়ক পরিস্থিতি লক্ষ্য করা গেছে। বলা যায়, স্বস্তি দিয়েই শুরু হয়েছে এবারের ঈদযাত্রা।

অপরদিকে, দীর্ঘ ১০ দিনের ঈদের ছুটিতে নাড়ীর টানে প্রিয়জনের উদ্দেশ্যে আনন্দের ঈদ যাত্রাকে স্বস্তিদায়ক করতে গাজীপুর মহানগর পুলিশ, গাজীপুর জেলা পুলিশ, হাইওয়ে পুলিশ, গাজীপুর জেলা প্রশাসন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশন ও সেনাবাহিনী সমন্বিতভাবে বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করেছে। সবারই লক্ষ্য, ঈদে ঘরমুখো মানুষ যেন কোনো রকম যানজট ও অন্যান্য দুর্ভোগে না পড়ে স্বস্তিতে বাড়ি ফিরতে পারে।

বুধবার সরেজমিনে দেখা যায়, রাজধানী থেকে দেশের উত্তরাঞ্চলগামী প্রবেশমুখ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের চন্দ্রা এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের চান্দনা চৌরাস্তায় যাত্রীদের ভিড় দেখা গেছে। দুটি মহাসড়ক দিয়ে ঈদ যাত্রা শুরু হয়েছে। তবে, মহাসড়কের কোথাও কোনো যানজট তৈরি হয়নি। ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে পুলিশের পক্ষ থেকে তিনস্তর বিশিষ্ট নিরাপত্তা ব্যবস্থা নেয়া হয়েছে। সকাল থেকে চন্দ্রা এবং চান্দনা চৌরাস্তা দিয়ে ঈদে বাড়ি যাচ্ছে মানুষ। মহাসড়ক পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকায় নির্বিঘ্নে বাড়ি যাচ্ছেন সাধারণ মানুষ। ঘরমুখী মানুষ ও যানবাহনের ব্যস্ততা রয়েছে দুই মহাসড়কে। তবে যান চলাচল স্বাভাবিক রয়েছে। এখন পর্যন্ত কোথাও যানজটের দেখা মেলেনি। স্বস্তিতেই বাড়ি ফিরছেন সবাই। যাত্রীদের প্রত্যেকের হাতেই একাধিক ব্যাগ ছিল। অনেকের মাথায় ছিল বস্তা। লম্বা ছুটি পাওয়ায় পরিবার-পরিজনকে অনেকেই আগেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছেন। সাধারণ সময়ের চেয়ে পরিবহনের ভাড়া কিছুটা বেশি আদায় করা হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন যাত্রীরা।

এস আর পরিবহনের ড্রাইভার জানান, বুধবার সকাল থেকেই যাত্রীর চাপ বেড়েছে। দুপুরের দিকে অনেক কারখানা ছুটি হবে, এরপর চাপ আরো কয়েকগুণ বাড়বে।
নেত্রকোনার জসিম জানান, ১০ দিনের ঈদের ছুটিতে বাড়ি যাচ্ছি। রাতে নাইট ডিউটি শেষ করে সকালে রওনা হয়েছি। সড়কে তেমন কোনো ভিড় নেই। মনে হচ্ছে, আরামসে বাড়ি যেতে পারব। তবে বিকেলে এই পরিবেশ থাকবে না, কারণ অনেক কারখানা ছুটি হবে।
শিল্প পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিল্পঅধ্যুষিত গাজীপুরে ২১৭৬টি নিবন্ধিত কলকারখানা রয়েছে। এসবের মধ্যে ১১৫৪টি তৈরি পোশাক কারখানা। এসব কারখানায় কাজ করেন লাখ লাখ শ্রমিক। ঈদযাত্রায় হঠাৎ করে যাতে মহাসড়কে যাত্রীর চাপ না বাড়ে, সে জন্য এবারে তিন দিনে এসব কলকারখানায় ছুটির সিদ্ধান্ত হয়েছে। সে অনুযায়ী গত মঙ্গলবার ১০ ভাগ কারখানায় ঈদের ছুটি দেয়া হয়েছে। একারণে প্রথম দিনের ঈদ যাত্রায় মহাসড়কে তেমন কোনো প্রভাব পড়েনি। ফলে ঈদ যাত্রা স্বস্তি দিয়ে শুরু হয়েছে।

সংশ্লিষ্ট সূত্র জানায়, গাজীপুরের উপর ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দিয়ে উত্তরবঙ্গের ২৩ জেলার মানুষ এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক দিয়ে বৃহত্তর ময়মনসিংহের ৭টি জেলার মানুষ রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে যাতায়াত করেন। ফলে এ দুটি মহাসড়ক দিয়ে লাখ লাখ ঘরমুখো মানুষ ঈদ যাত্রায় বাড়ি ফিরবেন।
ঈদ যাত্রা স্বস্তিদায়ক করতে গাজীপুর মহানগর পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ৪০০ পুলিশ সদস্য নিয়ে দায়িত্ব পালন করছে। জিএমপি কমিশনার ড. নাজমুল করিম খান জানান, গাজীপুর মহানগর পুলিশের অধীনে ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের টঙ্গী থেকে রাজেন্দ্রপুর চৌরাস্তা এবং ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কোনাবাড়ী পর্যন্ত দুটি মহাসড়কের যানজট নিরসন ও ঘরমুখো মানুষের ঈদযাত্রা নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করতে কাজ করছে ট্রাফিক বিভাগ। উর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের সরাসরি তত্ত্বাবধানে এ কাজে ভ্রাম্যমাণ আদালত যুক্ত রয়েছে। আমাদের লক্ষ্য, এবারে ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন, নিরাপদ ও স্বস্তিদায়ক করা। যাত্রীরা যাতে হয়রানির শিকার না হন, তারা যাতে নিরাপদে গাড়িতে উঠতে পারেন এবং বাসে যাতে অতিরিক্ত ভাড়া আদায় করতে না পারে, সেজন্য ভ্রাম্যমাণ আদালত কাজ করছে।
গাজীপুর জেলা পুলিশের পুলিশ সুপার ড. চৌধুরী মো: যাবের সাদেক জানান, এবারের ঈদ যাত্রায় গাজীপুর জেলা পুলিশ মহাসড়কের তাদের অংশে প্রায় ৮০০ পুলিশ সদস্য নিয়ে যানজট নিরসন ও যাত্রী চালকদের সেবায় কাজ করছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের কালিয়াকৈর চন্দ্রা এলাকায় ৫৯৭ জন পুলিশ সদস্য এবং ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়কের মাওনা এলাকায় ২০০ পুলিশ সদস্য কাজ শুরু করেছে। তিনি বলেন, আমি সহ অন্যান্য সিনিয়র কর্মকর্তাগণ সরাসরি মহাসড়কে উপস্থিত থেকে যানজট, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে কাজ করছি।
বিডিবিএন২৪/আরডি

