ফিচার ডেস্ক,বিডি বাংলা নিউজ২৪
সিগারেটের ভেতরে তামাকের বিষ থাকলেও তা মোড়ানো থাকে সাদা কাগজে। তামাক মৃত্যু এবং ব্যাধির উৎস হওয়া সত্ত্বেও নানা কূটকৌশল অবলম্বন করে বহাল তবিয়তে এর ব্যবসা চালিয়ে যাচ্ছে তামাক কোম্পানিগুলো। প্রতিনিয়ত বাহারি মোড়ক ও নিত্যনতুন স্বাদ-গন্ধ ব্যবহার করে নতুন প্রজন্মের কাছে তামাকপণ্যের জীবনক্ষয়ী চরিত্র আড়াল করা হয়। একই সঙ্গে নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে নানামুখী হস্তক্ষেপের মাধ্যমে শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ নীতি গ্রহণ ও বাস্তবায়নের পথে বাধা সৃষ্টি করে কোম্পানিগুলো। এমন পরিস্থিতিতে আজ পালিত হচ্ছে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস।
আজ ৩১ মে বিশ্বজুড়ে দিবসটি পালন করা হয়। বিকল্প খাদ্য ফসল উৎপাদন ও বিপণনের সুযোগ সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টেকসই ও পুষ্টিকর ফসল চাষে তামাক চাষিদের উৎসাহিত করতে দিবসটি পালিত হচ্ছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিএইচও) সদস্য রাষ্ট্রসমূহ ১৯৮৭ সালে বিশ্ব তামাকমুক্ত দিবস চালু করে।
তামাক চাষ, তামাকজাত পণ্য উৎপাদন ও ব্যবহার পরিবেশের জন্য কতটা ক্ষতিকর, সে বিষয়ে জনসাধারণ এবং নীতিনির্ধারণী পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টির লক্ষ্যে এ বছর দিবসটির প্রতিপাদ্য নির্ধারণ করা হয়েছে ‘তামাক কোম্পানির কূটকৌশল উন্মোচন করি, তামাক ও নিকোটিনমুক্ত বাংলাদেশ গড়ি’।
উন্নয়নশীল দেশগুলোতে বিশ্বের ৯০ ভাগ তামাক উৎপাদন হয়। এসব দেশের মধ্যে বাংলাদেশ অন্যতম। তামাকচাষে ব্যবহৃত জমির পরিমাণের দিক থেকে বাংলাদেশের অবস্থান বিশ্বে ১৩তম। বিশ্বের মোট তামাকের ১ দশমিক ৩ শতাংশ উৎপাদিত হয় বাংলাদেশে।

আমাদের দেশে আবাদযোগ্য জমিতে তামাক চাষের কারণে খাদ্য নিরাপত্তা হুমকির মুখে রয়েছে। কারণ যে জমিতে তামাক উৎপাদন করা হয় সেখানে অন্য কোনো ফসল আর উৎপাদন করা যায় না।

টোব্যাকো অ্যাটলাসের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের প্রায় ৩১ শতাংশ বননিধনের জন্য তামাক দায়ী। এছাড়া তামাক চাষে ব্যবহৃত অতিরিক্ত কীটনাশক ও সার বৃষ্টির পানিতে ধুয়ে জলাশয়ে মিশে ক্ষতিগ্রস্ত করছে দেশের পানি সম্পদ ও মৎস্য উৎপাদন। এ কারণে দেশের একমাত্র প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন কেন্দ্র হালদা নদী ইতোমধ্যে হুমকির মুখে পড়েছে।
তামাক কোম্পানিগুলো তাদের বাজার ধরে রাখতে বর্তমানে সুগন্ধিযুক্ত তামাকপণ্য বাজারজাতকরণ, শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের আশপাশে সহজলভ্যতা নিশ্চিতকরণ, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে জনপ্রিয় সেলিব্রেটিদের দিয়ে প্রচার চালানো, বিভিন্ন সাংস্কৃতিক ও ক্রীড়া অনুষ্ঠানে পৃষ্ঠপোষকতায় জড়িত। এসব কর্মকাণ্ড পরিবেশ, অর্থনীতি এবং সমাজের ওপর নেতিবাচক প্রভাব বাড়িয়ে তোলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, বিশ্বজুড়ে ১৩ থেকে ১৫ বছর বয়সী অন্তত ৩ কোটি ৭০ লাখ কিশোর-কিশোরী নিয়মিত তামাকপণ্য ব্যবহার করে। বিপুল সংখ্যক তরুণ ২১ বছর বয়সের আগেই তামাকে আসক্ত হয়। তাদের মধ্যে নিকোটিন নির্ভরতা গড়ে ওঠে প্রবলভাবে এবং এই আসক্তি আমৃত্যু বহমান থাকে।
তাই তামাকের বিরুদ্ধে লড়াই কেবল স্বাস্থ্য রক্ষার বিষয় নয়, এটি একটি অর্থনৈতিক, পরিবেশগত ও নৈতিক লড়াইও। এ কারণে তামাকমুক্ত ভবিষ্যৎ গড়তে সুসংহত নীতিমালা, কঠোর আইন প্রয়োগ এবং জনসচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্বারোপ করছেন বিশেষজ্ঞরা।
বিডিবিএন২৪/আরডি


