
স্পোর্টস ডেস্ক,বিডি বাংলা নিউজ২৪
আর্জেন্টিনা জাতীয় ফুটবল দলের স্ট্রাইকার লিওনেল মেসির ৩৬তম জন্মদিন আজ। আজকের দিনেই ধরাধামে পা রেখেছিলেন সর্বকালের অন্যতম সেরা ফুটবলার লিওনেল মেসি। দেখতে দেখতে জীবনের ৩৬ বসন্ত পার করে পা রেখেছেন ৩৭-এ। বল পায়ে কারিকুরি দেখিয়ে প্রায় দুদশক ধরে মোহাবিষ্ট করে রেখেছেন কোটিভক্তকে।
শুধু কি সাধারণ ফুটবলপ্রেমীরাই মেসির পায়ের জাদুতে বিমোহিত? না। ফুটবলের এমন কোনো কিংবদন্তি-মহারথী নেই যারা মেসি-বন্দনায় মাতেননি। পেলে, ম্যারাডোনা থেকে শুরু করে ইয়োহান ক্রুইফ পর্যন্ত মেসির অকুণ্ঠ প্রশংসা করেছেন। ক্রুইফ তো বলেই দিয়েছিলেন, এই ছেলেটা সাতটা ব্যালন ডি’অর জিতবে। মেসি আটটা জিতে প্রমাণ করেছেন, কল্পনার জগতকেও বাস্তবে নামিয়ে আনার মন্ত্র জানা আছে তার।
১৯৮৭ সালের ২৪ মে আর্জেন্টিনার রোজারিও শহরে খুব সাধারণ এক ঘরে জন্মগ্রহণ করেন বর্তমান সময়ের অন্যতম সেরা ফুটবল তারকা। পৃথিবতে পাঠানোর আগে তাকে দেয়া হলো ফুটবল খেলার জন্য ক্ষুরধার মস্তিষ্ক, একজোড়া অসাধারণ পা। আর সঙ্গে দেয়া হলো হরমোনাল কিছু জটিলতা।
তাই হয়তো ৬ বছর বয়সে যখন দাদির হাত ধরে এলাকার ফুটবলে পা লাগিয়েছেন তখন থেকেই মেসি যেন ‘দ্য পয়েন্ট অব ডিফ্রেন্স।’ ছোট্ট একটা বাচ্চা ভীষণ অবলীলায় বল পায়ে এগিয়ে যাচ্ছেন তার চেয়ে উঁচু উঁচু খেলোয়াড়দের পাশ কাটিয়ে– পয়েন্ট অব ডিফ্রেন্স তো সম্ভবত এভাবেই হয়।
মেসির এরপরের গল্পগুলো আপনার জানা। রোজারিও থেকে বার্সেলোনা, সেই ন্যাপকিনে লেখা প্রথম চুক্তি– বার্সেলোনার জাদুকরী সব রাত… চোখের সামনে দেখে আসা সব মুহূর্ত। তবু কেন যেন পড়তে গিয়ে ক্লান্ত হতে হয় না। খুব সাধারণ একজন মেসিকে সব বাধা পেরিয়ে অসাধারণ হতে দেখার মাহাত্ম্যটা বুঝি এমনই।
২০০৪ সালে বার্সেলোনার জার্সিতে অভিষেক হয়েছিল মেসির। একটা ফুটবল ক্লাবকে যা কিছু জেতানো সম্ভব, তার সবকিছু জিতিয়েছেন। ক্লাবের ট্রফি ক্যাবিনেটের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত অর্জনের ঝুলিকেও সমৃদ্ধ করেছেন। ২০০৯ থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত রেকর্ড টানা চারবার জয় করেছেন ব্যালন ডি’অর।
ক্লাবের হয়ে শত প্রাপ্তির পরও একটা অপ্রাপ্তি ক্যারিয়ারজুড়ে কুঁড়ে খেয়েছে মেসিকে। আর্জেন্টিনার জার্সিতে একটা ট্রফির বিনিময়ে জীবনের সব অর্জন বিলিয়ে দিতে রাজি ছিলেন তিনি। কিন্তু টানা তিন বছর তিনটি ফাইনালে হৃদয়ভাঙা হারে মুষড়ে পড়েছিলেন। ২০১৪ বিশ্বকাপের পর ২০১৫ ও ২০১৬ সালে কোপা আমেরিকার ফাইনালে হেরে যায় মেসির আর্জেন্টিনা। তবে ভক্তদের ভালোবাসায় ২০২১ সালে তার সে পরম আরাধ্য স্বপ্ন পূরণ হয়েছে কোপা জয়ের মাধ্যমে। ২৮ বছর পর আর্জেন্টিনাকে এনে দিয়েছেন শিরোপা। পরের বছর তার ক্যারিয়ার ‘পূর্ণতা’ পায়।
তবে এই মেসিরও জীবনটা এতটাও সহজ ছিল না, অপবাদ ছিল হেডে গোল করতে পারেননা, সেটা করেছেন ২০০৯ সালের চ্যাম্পিয়ন্স লিগের ফাইনালে। যে গোলটাকে মেসি নিজেই বলেছেন তার ক্যারিয়ারের সেরা গোল। অপবাদ ছিল ইংলিশ ক্লাবের বিরুদ্ধে মেসি নিষ্প্রভ। কিন্তু বর্তমান বলছে ইংলিশ ফুটবলের টপ সিক্স ক্লাবের বিপক্ষে সবচেয়ে বেশি গোলদাতার একজন এই আর্জেন্টাইন।
সবচেয়ে বড় অপবাদ ছিল লিওনেল মেসি আর্জেন্টিনার না, বার্সেলোনার মেসি যতটা উজ্জ্বল, ততটা আলো ছড়ায়নি আর্জেন্টিনার জার্সিতে। অথচ ২০২৫ সালে এসে মেসিকে ক্লাবের জার্সিতে যত আপন লাগে, আর্জেন্টিনায় তারচেয়ে বেশি মোহনীয় মনে হয়।
পয়েন্ট অব ডিফ্রেন্সটা অবশ্য ২০২১ থেকে। যেদিন চিরপ্রতিদ্বন্দ্বীদের মাঠ ব্রাজিলে গিয়ে সেই ব্রাজিলকেই হারিয়ে জিতে এসেছিলেন কোপা আমেরিকার শিরোপাটা। এরপর ফিনালিসিমা আর ২০২২ সালের সেই অসামান্য বিশ্বকাপ। প্রথম ম্যাচে সৌদি আরবের কাছে হার। সেখান থেকে মেক্সিকো ম্যাচে প্রবল চাপের মুখে একটা ২৫ গজ দূর থেকে নেয়া শট– আরও একবার মেসি হয়ে উঠলেন সেই পার্থক্য গড়ে দেয়া মানুষটা। এরপর বাকি সব জটিলতা পেরিয়ে লুসাইল স্টেডিয়ামে মেসি হলেন অমর। হয়ে উঠেছিলেন সর্বকালের সেরা ফুটবলারও।
মেসির গল্পগুলো আপনাকে মুগ্ধ করে, কারণ জীবনে কোনো এক পর্যায়ে সবাই চায় ‘পয়েন্ট অব ডিফ্রেন্স’ হয়ে জিতে আসতে। কোনো এক গল্পে সবাই নিজেকে বিজয়ী দেখতে চায়– আর মেসি হয়ত সেটার সবচেয়ে বড় অণুপ্রেরণার একজন। হরমোন থেকে শুরু করে ফুটবল মাঠ– মেসি জিতেছেন সবই।
মেসি এখন কোপা আমেরিকায় ব্যস্ত। হয়তো ক্যারিয়ারের শেষ কোপা আমেরিকা খেলছেন। আগামী বিশ্বকাপ পর্যন্ত আর্জেন্টিনার সঙ্গে থাকবেন কিনা, তা নিয়ে এখনো ধোঁয়াশা রয়েছে। যদি সেটা না হয়, তাহলে এবারের কোপাই হতে পারে মেসির শেষ আন্তর্জাতিক টুর্নামেন্ট। রোজারিওর যে ছেলেটা ফুটবল দিয়ে অমর হয়েছে পৃথিবীর ইতিহাসে, তার সঙ্গে আমাদের গল্পটাও হয়ত মিশে যাবে, শেষবারের মতো।
বিডিবিএন২৪/আরডি

