
ঝিনাইদহ প্রতিনিধি,বিডি বাংলা নিউজ২৪
ঝিনাইদহ জেলার শৈলকুপা থানার ৬নং সারুটিয়া ইউনিয়নের ভুলুনদিয়া গ্রামের কুখ্যাত অপরাধী কানাই এর ছেলে জুয়েলের নেতৃত্বে পরিচালিত একটি সন্ত্রাসী গ্যাং আবারও এলাকায় সক্রিয় হয়ে উঠেছে। দীর্ঘদিন ধরেই এলাকাবাসী এই গ্যাংয়ের হাতে জিম্মি হয়ে রয়েছে।

অভিযোগ রয়েছে, ‘জুয়েল গ্যাং’ নিয়মিত সাধারণ মানুষকে হয়রানি, লুটপাট, চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা, অবৈধ অস্ত্র কারবার এবং সুদের ব্যবসার সঙ্গে জড়িত। এই চক্রটি আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার ছত্রছায়ায় নানা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করে আসছে। স্থানীয়দের অভিযোগ, সাবেক ইউনিয়ন চেয়ারম্যান মো. মাহামুদুল হাসান মামুন ও বর্তমানে সাবেক চেয়ারম্যান রিজাউল করিম আলাল এই গ্যাংয়ের কার্যক্রমে পরোক্ষভাবে সহযোগিতা করছেন।

*সেনাবাহিনীর অভিযানে বিপুল অস্ত্র উদ্ধার*
কয়েক মাস আগে সেনাবাহিনীর একটি বিশেষ অভিযানে জুয়েল ও তার গ্যাংয়ের কয়েকজন সদস্য এবং তার পরিবারের কিছু সদস্যকে আটক করা হয়। অভিযানে জুয়েলের বাড়ি থেকে বিপুল পরিমাণ ধারালো অস্ত্র, একটি ৯ এমএম পিস্তল এবং তার ছোট ভাই রানার ঘর থেকে ৬ বোতল ফেনসিডিল উদ্ধার করা হয়। তাদের অপর ভাই রুবেল ওই সময় পালিয়ে যায়।
জিজ্ঞাসাবাদের পর সেনাবাহিনী জানায়, এই পরিবার দীর্ঘদিন ধরে অস্ত্র ব্যবসা, মাদক চোরাচালান ও সুদের কারবারে জড়িত। পরে সেনাবাহিনী আটককৃতদের পুলিশ হেফাজতে হস্তান্তর করে।
*পিতাও জড়িত: বাড়ি থেকে রিভলবার উদ্ধার*
এর কয়েকদিন পর সেনাবাহিনীর আরেক অভিযানে জুয়েলের পিতা মো. জমিরুল ইসলাম ওরফে কানাইকে নিজ বাড়ি থেকে আটক করা হয় এবং তার কাছ থেকেও একটি রিভলবার উদ্ধার করা হয়।

*পরিবারের অন্যান্য সদস্যরাও জড়িত*
জানা গেছে, জুয়েলের ভাই রনি ও তুষার সুদের ব্যবসা ও অস্ত্র কারবার পরিচালনা করে আসছে। এর আগে জুয়েলের চাচা মো. জহিরুল ইসলাম ওরফে বলাই কাতলাগাড়ি বাজার এলাকা থেকে একটি বন্দুক, ১২ রাউন্ড গুলি এবং ৬ রাউন্ড রাইফেলের গোলাবারুদসহ পুলিশের হাতে গ্রেফতার হয়।
*জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার সক্রিয়*
অবাক করার মতো বিষয় হলো, এই গ্যাংয়ের বেশিরভাগ সদস্য সম্প্রতি জামিনে মুক্তি পেয়ে আবার এলাকায় ত্রাস সৃষ্টি করছে। গ্যাংয়ের সক্রিয় সদস্যদের মধ্যে রয়েছে: সজিব, রাজিব, কাজেম, আবুজার, সালাম, ইনুচ কামাল, হাসমত, ইমন, মিঠু, জিন্দার, রোমান মহিরদ্দী, সাগর ও সাওন।
এলাকাবাসী দাবি করছে, প্রশাসনের চোখে ধুলো দিয়ে এই গ্যাং পুনরায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা এবং অস্ত্র কারবার শুরু করেছে। ভুক্তভোগীদের অনেকেই ভয়ে মুখ খুলতে পারছেন না।
*আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর হস্তক্ষেপ কামনা*
স্থানীয় বাসিন্দারা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর প্রতি আহ্বান জানিয়েছেন, যেন এই গ্যাংয়ের বিরুদ্ধে স্থায়ী ও কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। তাদের দাবি, জুয়েল গ্যাং ও তাদের রাজনৈতিক পৃষ্ঠপোষকদের আইনের আওতায় না আনলে সারুটিয়া ইউনিয়নসহ গোটা শৈলকুপা অঞ্চল অচিরেই সন্ত্রাসের অভয়ারণ্য হয়ে উঠবে।
*জামিন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় রাজনীতির একটি প্রভাবশালী অংশ সক্রিয় ভূমিকা*
এদিকে, অভিযোগ রয়েছে যে জুয়েল গ্যাংয়ের জামিন প্রক্রিয়ায় স্থানীয় রাজনীতির একটি প্রভাবশালী অংশ সক্রিয় ভূমিকা রেখেছে। জানা গেছে, বর্তমান উপজেলা ছাত্রদলের সদস্য সচিব আলামিন—যিনি সাবেক চেয়ারম্যান রিজাউল করিম আলাল বিশ্বাসের ছেলে—তার প্রত্যক্ষ নেতৃত্বে এবং প্রভাব খাটিয়ে জুয়েল ও তার সহযোগীদের জামিন করিয়ে আনা হয়। এলাকার সাধারণ মানুষের বক্তব্য অনুযায়ী, আলামিন গোপনে জুয়েল গ্যাংয়ের কার্যক্রমে সমর্থন দিচ্ছেন এবং এই চক্রটিকে রাজনৈতিকভাবে রক্ষা করছেন। ফলে গ্যাংটি পুনরায় এলাকায় চাঁদাবাজি, মাদক ব্যবসা ও অস্ত্র কারবারে সক্রিয় হয়ে উঠেছে।
বিডিবিএন২৪/আরডি

